Chapter 3: ক্ষুধা, অপমান আর সেই সিদ্ধান্ত – "চলো, আমার বাপের বাড়ি!"

বিয়ের পর শুরুটা ছিল মিষ্টি। হাসি ছিল, ভালোবাসা ছিল, স্বপ্ন ছিল। কিন্তু খুব দ্রুতই সবকিছু বদলে গেল।

বাস্তবতার নির্মম মুখ আকাশের চাকরি নেই। নাঈমার তখনো বড় কোনো ইনকাম নেই। শ্বশুরবাড়ির সবাই একসময় মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করল… প্রথমে কথা কমে গেল, তারপর সম্মান কমে গেল, তারপর… খাবার কমে গেল।

🍚 একবেলা খেয়ে, একবেলা না খেয়ে… রান্নাঘরে ঢুকলে নাঈমা দেখত— এক মুঠো চাল… একটু ডাল… কিছুই নেই। মাঝে মাঝে আকাশ চুপচাপ তাকিয়ে থাকত স্ত্রীর দিকে। তার চোখে লজ্জা… কষ্ট… ভাঙা স্বপ্ন। নাঈমা কিছু বলত না। হাসিমুখে বলত— “চিন্তা কোরো না, সব ঠিক হবে।” কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে কান্না চেপে রাখত। মুখে হাসি, মনে আগুন।

😔 অপমানের তীর শ্বশুর একদিন জোরে বলল— “আমার ছেলের বউ গাইগাই করে গান করবে? আর আমার ছেলে ঘরে বসে থাকবে?” আরেকদিন— “তোমাদের জন্য কত খরচ করেছি! আর আকাশ তো কিছুই করে না!” সবাইয়ের সামনে কথা শুনতে শুনতে আকাশ মাথা নিচু করে থাকত। আর নাঈমার বুকটা যেন কেউ মুঠি করে চেপে ধরত।

💔 একদিন শ্বশুর ঘোষণা করল… “আজ থেকে আর খরচ নেই! যেমন খুশি থাকো!” বাজার বন্ধ। দুধ বন্ধ। সবজি বন্ধ। সরাসরি খোরাকি বন্ধ!

👶 তখন আলিফের বয়স মাত্র ২ বছর শিশু আলিফ কাঁদত “মা ভাত দাও…” নাঈমা কিছুই বলতে পারত না। এক হাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরত… অন্য হাতে ঠাণ্ডা পানি খেত পেট ভরানোর জন্য। মা হওয়া সত্ত্বেও নিজের সন্তানের ক্ষুধা দেখতে হলো। এই যন্ত্রণা… এই অপমান… কোনও শব্দ দিয়ে বোঝানো যায় না।

😭 আকাশ ভেঙে পড়ছিল… এক রাতে আকাশ হঠাৎ বলল— “আমি ব্যর্থ… আমার পরিবারের জন্য আমি কিছু করতে পারি না…” সে কান্না চেপে রাখছিল। কিন্তু এবার নাঈমা তার হাত ধরে বলল— “না! তুমি ব্যর্থ নও! পরিস্থিতি খারাপ, তুমি না!” এই কথাগুলো আকাশের হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে দিল।

💡 কিন্তু এবার নাঈমা একটা বড় সিদ্ধান্ত নিল… সে রাতভর ভাবল… কান্না করল… দোয়া করল… সকাল বেলা আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ়ভাবে বলল— “এইভাবে আর না খেয়ে কতদিন কাটাবো?” “চলো… চলো আমার বাপের বাড়ি!” আকাশ চমকে গেল। “তোমার বাপের বাড়ি… সেখানে তো…” নাঈমা বলল— “হ্যাঁ, ওরা গরীব। কিন্তু কখনো অভিমান করবে না। কখনো অপমান করবে না!” “এখানে আমরা শুধু বেঁচে আছি… ওখানে গিয়ে আমরা আবার বাঁচবো।” আকাশ নীরবে তাকিয়ে ছিল… দেখল তার স্ত্রী শুধু গায়িকা নয়… সে একজন সাহসী নারী!

🚶 সেই দিন… নাঈমা তার ২ বছরের ছেলে আলিফকে কোলে নিল, কিছু পুরনো জামা কাপড় গুছালো, এবং চোখে পানি নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। শ্বশুর একবারও জিজ্ঞেস করল না— “কোথায় যাচ্ছ?” এমনকি আকাশের বাবার চোখে এক ফোঁটা দয়া পর্যন্ত ছিল না। তবুও নাঈমা মনের মধ্যে বলল— “ও আমার শ্বশুর… ও আমার স্বামীর বাবা… আজ সে আমাদের ত্যাগ করল, কিন্তু আল্লাহ যদি আমাকে সামর্থ্য দেন… আমি একদিন নিজ হাতে ওনাকে খাওয়াবো…” “কারণ অবহেলা করলে ও, আমি কাউকে অবহেলা করবো না।” এই লাইনটি… এই ইমান… নাঈমাকে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বানিয়ে দিল।

✅ এটাই ছিল সেই মুহূর্ত… যা তার পুরো জীবন বদলে দিল। ✔ সে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে গেল অপমানে… ✔ কিন্তু ফিরল আত্মসম্মান নিয়ে! ✔ ফিরল নিজেকে নতুন করে গড়ার ইচ্ছা নিয়ে! এখন সময়… নিজস্ব শক্তি দেখানোর! নিজের নাম তৈরি করার! কারণ সামনে অপেক্ষা করছিল নাঈমার জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায়…

➡️ (Next Chapter:4 “নতুন শুরু, বোন মীম, আর আশার আলো”)

⬅ ফিরে যান মূল মেগা সিরিজে